স্বদেশ ডেস্ক:
তিন বছরের চরম খরা সম্ভবত ১২০০ খ্রিস্টপূর্বে শক্তিশালী হিট্টাইট সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়েছে উল্লেখ করে পতনশীল সভ্যতার এই দুর্দশাকে আধুনিক বিশ্বের জলবায়ু সঙ্কটের সাথে যুক্ত করেছেন গবেষকরা।
হিট্টাইটরা প্রায় ৫০০ বছর ধরে আধুনিক তুরস্কের আনাতোলিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিল। এমনকি কিছু সময়ের জন্য মিসরীয় সাম্রাজ্যের শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।
পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এবং নিকট প্রাচ্যের বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী প্রাচীন সভ্যতার মধ্যে একটি ছিল এই হিট্টাইট। হিট্টাইট সাম্রাজ্য দীর্ঘ খরায় প্রায় একই সময়ে ভেঙে পড়ে বা মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, ব্রোঞ্জ যুগে পর্দা নামিয়ে দেয়।
হিট্টাইটরা রহস্যজনকভাবে তাদের রাজধানী এবং ধর্মীয় কেন্দ্র ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে ত্যাগ করে, যখন রাজকীয় ধারাটি শেষ হয়ে যায় এবং লিখিত ঐতিহাসিক নথি নিঃশেষ হয়ে যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটির একজন প্রত্নতাত্ত্বিক এবং একটি নতুন গবেষণার প্রধান লেখক স্টার্ট ম্যানিং এএফপি’কে বলেছেন, সাম্রাজ্যের শতাব্দী-প্রাচীন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামো ‘বেশ দ্রুততার সাথে’ শেষ হয়ে গেছে।
‘ব্রোঞ্জ যুগের শেষের দিকে পতন’ এর পিছনে কী ছিল তার জন্য বেশ কয়েকটি তত্ত্ব রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ‘সি পিপলস’ নামক নৌ আক্রমণকারীদের আক্রমণ, মহামারী এবং দুর্ভিক্ষ। সেইসাথে শুষ্ক, শীতল জলবায়ুতে ৩০০ বছরের পরিবর্তন।
কিন্তু ঠিক কী কারণে এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এখন, অন্তত হিট্টাইটদের জন্য উত্তরটি প্রাচীন জুনিপার কাঠের রিংগুলোতে খোদাই করা থাকতে পারে।
জুনিপারটি বিশ্বের প্রাচীনতম কাঠের কাঠামোগুলির মধ্যে একটি থেকে এসেছে। যা ১৯৫০-এর দশকে একটি রাজার সমাধি খননের অংশ হিসেবে মধ্য তুরস্কের গার্ডিয়ানের ফ্রিজিয়ান রাজধানীতে পাওয়া গিয়েছিল।
জুনিপার কাঠের রিংগুলি বিশ্লেষণ করে গবেষকরা ৩,০০০ বছরেরও বেশি আগে জলবায়ু পরিস্থিতি পুনর্গঠন করতে সক্ষম হন।
ম্যানিং বলেন আধা-শুষ্ক সেন্ট্রাল আনাতোলিয়ায়, ‘এই অঞ্চলের বেশিরভাগ গাছপালা বৃদ্ধির প্রধান হুমকি হলো পানির অভাব’।
সংকীর্ণ গাছের রিংগুলো শুষ্ক বছরগুলি নির্দেশ করে যখন পানির অভাব মানে গাছগুলো খুব বেশি বৃদ্ধি পায় না।
বুধবার নেচার জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষা অনুসারে, রিংগুলো ১১৯৮ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ১১৯৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত- ‘অস্বাভাবিকভাবে’ কম বৃদ্ধিসহ তিনটি সরাসরি বছর দেখায়, যা একটি দীর্ঘায়িত এবং বিশেষ করে গুরুতর খরার আভাস দেয়।
গবেষকরা বলেন, খরার কারণে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে, বিশেষকরে কেন্দ্রীয় হিট্টাইট রাজ্যের ভূমি-আবদ্ধ অংশগুলোর জন্য, যা শস্য ও পশুসম্পদ নির্ভর ছিল।
খাদ্য ঘাটতি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত সাম্রাজ্যের অবসান ঘটাতে পারে।
ম্যানিং সতর্ক করে দিয়েছিলেন, বর্তমান বিশ্ব উষ্ণায়ন মানে আধুনিক বিশ্ব হিট্টাইটদের হারিয়ে যাওয়ার মতো একটি ‘মাল্টি-বছরের অস্তিত্বের হুমকির’ সম্মুখীন হতে পারে।
ফিলাডেলফিয়ার টেম্পল ইউনিভার্সিটির একজন প্রত্নতাত্ত্বিক মুগে দুরসু-টানরিওভার, যিনি গবেষণায় জড়িত ছিলেন না, তিনি এটিকে ‘গ্রাউন্ডব্রেকিং’ বলে প্রশংসা করেছেন।
সূত্র : এএফপি